খুব সহজেই আপনি অথবা আপনার স্বজন কিংবা আপনার সবচেয়ে প্রিয়জন যে কেওই
হতে পারেন ভয়ানক প্রতারণার শিকার! সমুহ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে একদিকে আপনি
যতই বাড়াচ্ছেন সতর্কতা প্রযুক্তির নিত্য নতুন আবিস্কারের সুবাদে পেছনের
পরিচিত কৌশল ফেলে অপরাধীরা নতুন কৌশলে আপনাকে ফাঁদে ফেলতে আবারো কোমর বেধে
নিচ্ছে প্রস্তুতি!
প্রিয় পাঠক, প্রযুক্তির হাত ধরে অসাধু ব্যক্তিদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হবার ঘটনা নতুন কিছু নয়। একমাত্র সাবধানতা আর প্রয়োজনীয় সতর্কতাই একমাত্র পারে আমাদের অনাকাংখিত বিপদ এবং বিব্রতকর কোন পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে রাখতে। দিনের পালাবদলে এসেছে সব কিছুর পরিবর্তন।
সময়ের কণ্ঠস্বরের পাঠকদের জন্য এমনি কিছু নয়া প্রতারণার কৌশল থেকে বাঁচতে থাকছে একটি সতর্কতামুলক ফিচার ।
প্রতারণার শিকার হচ্ছেন নাতো! সতর্ক হোন এক্ষুনি
রাতে ভালো ঘুম হয়নি । করিম সাহেবের চোখ মুখে বিরক্তি। এখনি বাসের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। রিং বাজতেই ফোন রিসিভ করলেন। ফোন পেয়ে মনটা ভালো হয়ে গেল। আড়চোখে দেখলেন স্ত্রী রান্নাঘরে। একটা নম্বরে ডায়াল করলেন। নিজে খুব একটা কথা বলতে পারলেন না, ওপাশের কথা শুনলেন। মাসের শেষ, হাতে নগদ টাকা নাই। ব্যাংকে সামান্য সঞ্চয়। বেরুনোর আগে চেকবই সাথে নিলেন। মেজাজটা ফুরফুরে। লাইনে দাঁড়াতে আজ আর কষ্ট হলো না।
অফিসে চেকবইয়ে টাকার অঙ্কটা লিখলেন। পাঁচ লাখ। একটু খারাপ লাগলো। রিটায়ারমেন্টের খুব বেশী বাকী নাই। ছেলেটার অনার্স পাশ করলো। মেয়েটা এসএসসি দেবে। পাঁচ লাখ তুলে ফেললে বাকী থাকবে দুই লাখ সাতচল্লিশ হাজার। চেকে সই করে দিলেন। পাঁচ লাখ টাকা পাঠাতে হবে। তবে পুরস্কারের মূল্যও কম নয়। ২২ লাখ টাকা। একবার ভাবলেন স্ত্রীর সাথে শেয়ার করেন। কিন্তু পুরস্কারের কথা যে গোপন রাখতে হবে। বহুদিন আগে কেনা নকিয়া সেটটা হাতে নিলেন। মাস শেষে বিল দেখে গ্রামীণের সিম ব্যবহার করবেন না বলে ও ভেবেছিলেন। ভাগ্যিস ছাড়েননি। লাঞ্চ ব্রেকে বাইরে গেলেন। সরাসরি বিকাশের দোকানে। পাঁচ লাখ টাকাই পাঠালেন। ভিন্ন ভিন্ন এ্যাকাউন্টে। প্রত্যেকবার টাকা গুনে দোকানদারের হাতে দিচ্ছিলেন। অনেক কষ্টে জমানো টাকা। খারাপ লাগছিল। কিন্তু সেই কন্ঠ বারবার মাথার মধ্যে অনুরনিত হয়। “আপনি দুই লাখ সেরা গ্রাহকের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন। ”
Cell Phones & Accessories
করিম সাহেব সারাজীবনই পেছনে ছিলেন। কখনোই
কোনকাজে সেরা ছিলেন না। আজ প্রথমবারের মত সেরাদের মধ্যে সেরা। নিজের
অজান্তেই গর্বে বুক ভরে যায়। “পুরষ্কার হিসাবে আপনি পাবেন একটি নতুন
মাইক্রোবাস অথবা ২২ লক্ষ টাকা নগদ। ” আর্থিকমূল্যেও বিরাট, অন্ততঃ করিম
সাহেবের কাছে। চাকুরীতে সুযোগ পেয়েও তিনি নীতিভ্রষ্ট হন নাই। সারাজীবন সৎ
থাকার চেষ্টা করেছেন। তাঁর সততার পুরষ্কার বোধহয় তিনি এভাবেই পাচ্ছেন। এসব
ভাবতে ভাবতে তিনি অফিসে ফেরেন। ফুরফুরে মেজাজে সকলের সাথে অফিস ছাড়েন।
ড্রইংরুমে টেলিভিশনের চ্যানেল ঘুরাতে থাকেন। পুরষ্কারের টাকা পাবার পর একটা
নতুন টেলিভিশন কিনবেন। তাঁর কন্ঠে গুন গুন গান শুনে ছেলেটা মুখ ঘুরিয়ে
মুচকি হাসে।
খোদেজা সবসময় কম কথার মানুষ। ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে স্বামীর কাছে সেভাবে কোন আবদার করেনি। স্বামীর সামর্থ ও সে জানে। বাসার ফ্রিজটা প্রায়ই নষ্ট হয়। টাকাটা পেলে নতুন ফ্রিজ কিনে এনে খোদেজাকে সারপ্রাইজ দেবেন। খোদেজা ফ্রিজ দেখে কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবে-করিম সাহেব ভাবতে থাকেন। তিনদিন কিছুতেই ফুরাতে চায় না। তিনদিন পরেই তিনি পুরস্কারের চিঠি হাতে পাবেন। চতুর্থদিন এসে যায়। আজ একটু তাড়াতাড়িই অফিসে ঢোকেন। অফিসেই চিঠি আসবে। এই বুঝি চিঠি আসে। সারাদিনই অস্থির করিম সাহেব। অফিস টাইম শেষ। হয়তোবা জ্যামে আটকে আছে কুরিয়ারের গাড়ি। অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। মাগরিবের আযান হয়। এবার করিম সাহেব বাসায় রওয়ানা হন। নির্ঘুম রাত কাটে। পরের দিন অফিসে গিয়েই সেই নম্বরে ফোন দেন। ফোন যাচ্ছে না। রিডায়াল করতে থাকেন। না, ফোন বন্ধ। সবগুলো নম্বরই বন্ধ।
করিম সাহেবের বুকটা কেঁপে ওঠে। পাগলের মত ফোন করতে থাকেন। কোন লাভ হয় না। বুকের ভিতর চিন চিনে ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। চোখ খোলেন তিনি। বুঝতে পারেন হাসপাতালের বেডে। এদিক ওদিক তাকান। খোদেজাকে দেখতে পান। তাঁর হুঁশ ফিরেছে দেখে শাড়ীর আঁচলে চোখ মোছে। ছেলেমেয়ে ও আছে। কি হয়েছিল তা মনে করার চেষ্টা করেন। বুঝতে পারেন অফিসেই বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। সহকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। “দ্রুত হাসপাতালে এসেছিলেন, এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন”- ডাক্তারের হাসিমুখ দেখলেন। “স্যার, আচ্ছালামু আলাইকুম। আমি গ্রামীণ ফোন থেকে বলছি। যারা দীর্ঘদিন গ্রামীণ ফোন ব্যবহার করছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে কখনো কোন অভিযোগ হয়নি, এমন দুই লাখ সেরা গ্রাহকের মধ্যে লটারী করা হয়েছে। সেরা দুই লাখ গ্রাহকের মধ্যে দ্বিতীয় ভাগ্যবান আপনি। আপনি পুরস্কার হিসাবে পাবেন একটি বারো সিটের নতুন মাইক্রোবাস কিংবা ২২ লাখ নগদ টাকা। পুরস্কারের চিঠি হাতে পাওয়ার আগে কাউকে একথা বলা যাবে না। আপনি দয়া করে এখনই ০১৭১৪৩২৭………..নম্বরে ফোন করুন। ”
ফোন ব্যাক করতেই অফিসিয়াল ফর্মালিটিজগুলো খুব সুন্দর ভাবে বোঝানো হয় করিম সাহেবকে। গাড়ীর কাগজপত্র রেডি এবং রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। ছেলেটা এতো ভদ্র ও বিনয়ী, কোন সন্দেহ হয়নি তাঁর। নানা কথা ভাবতে ভাবতে সময় কেটে যায়। তিনদিন পর আবার অফিস যেতে শুরু করেন করিম সাহেব। গ্রামীণ ফোন অফিসে যোগাযোগ করে জানা যায় এরকম কোন লটারী কিংবা পুরস্কার প্রদানের বিষয় পুরোপুরি ভিত্তিহীন। করিম সাহেব প্রতারিত হয়েছেন। তাঁর সারাজীবনের সঞ্চয় এভাবে প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিল!
কেন কারো সাথে শেয়ার করতে বারন করেছিল তা তিনি বুঝতে পারেন। নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছা করে তাঁর। পুরস্কার প্রাপ্তির খবর শেয়ার না করার কোন কারন ছিল না-এটি কেন তাঁর মাথায় আসেনি। গ্রাহক বাড়ানোর কৌশল হিসাবে ফোন কোম্পানী কোটি টাকার বিজ্ঞাপন প্রচার করে। কিন্তু এই ধরনের পুরস্কারের কথা জানালে তো গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার কথা। অথচ এই ব্যাপারে কোন বিজ্ঞাপন কিংবা বিজ্ঞপ্তিতো তাঁর চোখে পড়েনি। এসব চিন্তা কেন যে মনে আসে নি! এজীবনে আর কাউকে বিশ্বাস করবেন না। করিম সাহেব চরম ধাক্কা খেয়ে শিখলেন।
প্রতারনা ও প্রতারকের ইতিহাস অনেক পুরোনো। সময়ের সাথে সাথে শুধু ধরণ পাল্টায়। আমরা যদি একটু সতর্ক হই, চিন্তাভাবনায় যৌক্তিক হই, অন্তর থেকে লোভ পরিহার করি তা’হলে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যাবে।
হাসপাতাল ছেড়েছেন কয়েকদিন। করিম সাহেব কেমন যেন মনমরা। শরীরের ওপর দিয়ে একটা ধকল গেছে। খোদেজা বেগম ভাবে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সহকর্মীরা কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন। মলিন মুখে ভালো আছেন জবাব দেন। রাতে ঘুমাতে পারেন না। তিনি কি স্ত্রীকে সব খুলে বলবেন? জানাজানি হয়ে যাবে। মানুষ বোকা ভাববে। সবাই বিদ্রূপ করবে। স্বল্পভাষী খোদেজা তীর্যক মন্তব্য করবে। ছেলেমেয়ে মুখ টিপে হাসবে। তাদের বাবা কি বোকা।
করিম সাহেব সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। মাঝেমধ্যেই করিম সাহেব ঐসব নম্বরে সংযোগ পেতে চান। সব বারই ব্যর্থ, মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায় না। এভাবে আরো এক সপ্তাহ কেটে যায়। রাতে এপাশ-ওপাশ করেন। গভীর রাতে মশারী থেকে বেরিয়ে জানালায় দাঁড়ান। গভীর রাতে ট্রাক আর কাভার্ড ভ্যানের শব্দ। খোদেজা বেগম সবই টের পান। স্বামী রাতে ঘুমান না। জিজ্ঞাসা করে সদুত্তর পায় না। বেশী প্রশ্ন করতে সাহসেও কুলায় না।
এমনিতে করিম সাহেব গোবেচারা টাইপের মানুষ। তবে বড্ড অভিমানী। ভেতরে ভেতরে করিম সাহেব ক্লান্ত। খোদেজাকে সব খুলে বলবেন। পঁচিশ বছর বিয়ে হয়েছে। স্ত্রীকে কোন কিছু গোপন করেন নি। খোদেজাই তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। দু’তিন দিন সংকল্প করেও বলা হয়ে ওঠেনা। আজ যে করেই হোক বলবেন। কখন বলা যায়। শুক্রবার, অফিস নাই। সারাদিন বাসায় থাকবে। আজই সুযোগ। ছেলেমেয়ে দু’জনই আজ বাসায়। ছোট্ট বাসা। সুযোগ হয় না। গভীর রাত।
সব শুনে খোদেজা নির্বাক। বিশ্বাস হতে চায় না। বিয়ের পর স্বামীকে দেবতা মনে করে এসেছে। কখনো লোভী হতে দেখেনি। শেষের দিকে করিম সাহেবের কন্ঠ ভারী হয়। পরম মমতায় স্বামীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। দু’জনেই চুপ করে থাকে। অনেকক্ষন পর খোদেজাই প্রথম কথা বলে। তার দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাই পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানায় আছে। পরেরদিন বাসা খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। অনেকদিন যোগাযোগ নাই।
বশির দারোগা চুপচাপ শোনে। এতোটা বোকামী। বশিরের ভীষন রাগ হয়। তার ইচ্ছা হয় ভগ্নিপতির গালে ঠাস করে চড় মারে। খালাতো বোনের সাথে সম্পর্ক খুব শীতল। তাই খুব একটা কথা হয় না। শুষ্ক কন্ঠে বশির মিয়া বাঁকা কথা শোনায়। খোদেজা অপমান বোধ করে। লজ্জ্বায় মুখ তুলতে পারেন না। বশিরের কথা শুনে করিম সাহেবের মনে হয় তিনিই প্রতারিত নন। তিনি নিজেই প্রতারনা করেছেন, অপরাধী।
বশির মিয়ার কাছে এই গল্প পুরোনো। আগেও এরকম তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে। কোনটারই প্রতিকার দিতে পারে নাই। কি করবে তা বুঝে উঠতেই পারে নাই। মটর সাইকেল স্টার্ট দিয়ে বশির মিয়া থানায় যায়। মিনিট বিশেক পরে ফেরত আসে। আশার কথা শোনায়। ডিবি’র লোকেরা নাকি এরকম প্রতারক গ্যাঙ ধরতে পারে। বশির মিয়া টেলিফোনে তার ব্যাচমেটের সাথে কথা বলে। ব্যাচমেট সন্ধ্যার পর ডিবি অফিসে দেখা করতে বলে।
আবারো বিদ্রূপের মুখামুখি হতে হবে। করিম সাহেব মানসিক প্রস্তুতি নেন। বশির মিয়ার ব্যাচমেট করিম সাহেবকে নিয়ে তার বসের রুমে ঢুকে। এসি সাহেবের বয়স কম। করিম সাহেবকে বসতে ইঙ্গিত করেন। ইতস্ততঃ করে করিম সাহেব সামনের চেয়ারটাতে বসে পড়েন। বশির মিয়া আর তার ব্যাচমেট দাঁড়িয়ে থাকে। এসি সাহেব প্রশ্ন করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পুরো কাহিনী শোনেন। প্রতারকের নম্বর এবং বিকাশ নম্বরগুলো নোট করেন। তিনি দেখবেন বলে করিম সাহেবকে বিদায় দেন। বশির মিয়ার মটর সাইকেলে করিম সাহেব বাসায় ফেরেন। এসি সাহেব তাকে কোন আশ্বাস দেন নি। করিম সাহেব কিছুটা হতাশ।
এসি সাহেব তার এডিসিকে সঙ্গে নিয়ে ডিসির রুমে যান। ডিসি স্যার অভিজ্ঞ মানুষ। সব শুনে কিছু নির্দেশনা দেন। এই ধরনের অভিযোগ আরো কয়েকটা এসেছে। একটা কিছু করা দরকার। মানুষকে প্রতারিত করছে। অনেক মানুষের সঞ্চয় হাতিয়ে নিচ্ছে। এসি সাহেব মাঠে নামেন। এডিসির সরাসরি তত্ত্বাবধানে তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্লেষন করেন। বুঝতে পারেন প্রতারকচক্র অনেক বেশী ধূর্ত। মোবাইলগুলোর রেজিস্ট্রেশন সব ভূয়া। প্রতারকদের অবস্থান এলাকা চিহ্নিত করে ফেলেন। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যায় না এরা। স্থানীয় পুলিশের সহায়তা নিয়ে ধরে ফেলেন কয়েকজন প্রতারক।
এরা খুব একটা শিক্ষিত নয়। কথায় খুব স্মার্ট। জিজ্ঞাসাবাদে অজানা তথ্য বেরিয়ে আসে। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকার ফুটপাতে অনেক ধরনের ক্যানভাসার থাকতো। কেউ তাবিজ, কেউ হালুয়া কিংবা কেউ বই বিক্রি করতো। সম্ভাব্য ক্রেতা আকৃষ্ট করতে হতো। ক্যানভাসারের বাচনিক দক্ষতার উপর বেচাবিক্রি নির্ভর করতো। এটাই ছিল তাদের জীবিকা। আস্তে আস্তে টেপ রেকর্ডার এসে যায়। ক্যানভাসারের জায়গা দখল করে টেপরেকর্ডার। ক্যানভাসারদের ব্যবসা গুটিয়ে যায়।
ক্যানভাসারদের একটা বড় অংশ পেশা পরিবর্তন করে। ক্ষুদ্র একটা অংশ প্রতারনার পেশায় নেমে পড়ে। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে টেলিফোনে কণ্ঠের জাদুতে মানুষকে কনভিন্স করে। প্রতারনার ফাঁদে ফেলে মানুষকে। পুরস্কারের প্রলোভনে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। ডিজিট দেখে অপেক্ষাকৃত পুরোনো নম্বরের গ্রাহক বেছে নয়। তারপর স্মার্ট কন্ঠে কল দিয়ে পুরস্কার প্রাপ্তির খবর দেয়। অন্যের সাথে শেয়ার করলে শিকার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই চাতুর্যের সাথে কারো সাথে শেয়ার করতে নিষেধ করে।
প্রচারেই প্রসার-ফোন কোম্পানীগুলো এই নীতিতে বিশ্বাস করে। পুরস্কার চালু করলে তা রেডিও-টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করবে। নানারকম বিজ্ঞাপন বানাবে। বারবার প্রচার করে কান ঝালাপালা করে ফেলবে। পোষ্টার বিলবোর্ড বানাবে। পুরস্কারতো গোপনে দেওয়ার কথা নয়। ফোন কোম্পানীর হটলাইনগুলোতে ফোন করেও বিষয়টা যাচাই করা সম্ভব।
এই ধরনের ঘটনায় প্রতারককে খুঁজে বের করা খুব কঠিন কাজ। প্রতারক ধরা পড়লেও সাজা নিশ্চিত করা আরো কঠিন। টাকা ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রতারনা প্রাচীন পেশা। সতর্ক থাকুন। এধরনের অফার পেলে নিজে নিজে পর্যালাচনা করুন। অন্যদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার সচেতনতায় প্রতারক তার পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হবে।
প্রিয় পাঠক, প্রযুক্তির হাত ধরে অসাধু ব্যক্তিদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হবার ঘটনা নতুন কিছু নয়। একমাত্র সাবধানতা আর প্রয়োজনীয় সতর্কতাই একমাত্র পারে আমাদের অনাকাংখিত বিপদ এবং বিব্রতকর কোন পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে রাখতে। দিনের পালাবদলে এসেছে সব কিছুর পরিবর্তন।
সময়ের কণ্ঠস্বরের পাঠকদের জন্য এমনি কিছু নয়া প্রতারণার কৌশল থেকে বাঁচতে থাকছে একটি সতর্কতামুলক ফিচার ।
প্রতারণার শিকার হচ্ছেন নাতো! সতর্ক হোন এক্ষুনি
রাতে ভালো ঘুম হয়নি । করিম সাহেবের চোখ মুখে বিরক্তি। এখনি বাসের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। রিং বাজতেই ফোন রিসিভ করলেন। ফোন পেয়ে মনটা ভালো হয়ে গেল। আড়চোখে দেখলেন স্ত্রী রান্নাঘরে। একটা নম্বরে ডায়াল করলেন। নিজে খুব একটা কথা বলতে পারলেন না, ওপাশের কথা শুনলেন। মাসের শেষ, হাতে নগদ টাকা নাই। ব্যাংকে সামান্য সঞ্চয়। বেরুনোর আগে চেকবই সাথে নিলেন। মেজাজটা ফুরফুরে। লাইনে দাঁড়াতে আজ আর কষ্ট হলো না।
অফিসে চেকবইয়ে টাকার অঙ্কটা লিখলেন। পাঁচ লাখ। একটু খারাপ লাগলো। রিটায়ারমেন্টের খুব বেশী বাকী নাই। ছেলেটার অনার্স পাশ করলো। মেয়েটা এসএসসি দেবে। পাঁচ লাখ তুলে ফেললে বাকী থাকবে দুই লাখ সাতচল্লিশ হাজার। চেকে সই করে দিলেন। পাঁচ লাখ টাকা পাঠাতে হবে। তবে পুরস্কারের মূল্যও কম নয়। ২২ লাখ টাকা। একবার ভাবলেন স্ত্রীর সাথে শেয়ার করেন। কিন্তু পুরস্কারের কথা যে গোপন রাখতে হবে। বহুদিন আগে কেনা নকিয়া সেটটা হাতে নিলেন। মাস শেষে বিল দেখে গ্রামীণের সিম ব্যবহার করবেন না বলে ও ভেবেছিলেন। ভাগ্যিস ছাড়েননি। লাঞ্চ ব্রেকে বাইরে গেলেন। সরাসরি বিকাশের দোকানে। পাঁচ লাখ টাকাই পাঠালেন। ভিন্ন ভিন্ন এ্যাকাউন্টে। প্রত্যেকবার টাকা গুনে দোকানদারের হাতে দিচ্ছিলেন। অনেক কষ্টে জমানো টাকা। খারাপ লাগছিল। কিন্তু সেই কন্ঠ বারবার মাথার মধ্যে অনুরনিত হয়। “আপনি দুই লাখ সেরা গ্রাহকের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন। ”
Cell Phones & Accessories
খোদেজা সবসময় কম কথার মানুষ। ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে স্বামীর কাছে সেভাবে কোন আবদার করেনি। স্বামীর সামর্থ ও সে জানে। বাসার ফ্রিজটা প্রায়ই নষ্ট হয়। টাকাটা পেলে নতুন ফ্রিজ কিনে এনে খোদেজাকে সারপ্রাইজ দেবেন। খোদেজা ফ্রিজ দেখে কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবে-করিম সাহেব ভাবতে থাকেন। তিনদিন কিছুতেই ফুরাতে চায় না। তিনদিন পরেই তিনি পুরস্কারের চিঠি হাতে পাবেন। চতুর্থদিন এসে যায়। আজ একটু তাড়াতাড়িই অফিসে ঢোকেন। অফিসেই চিঠি আসবে। এই বুঝি চিঠি আসে। সারাদিনই অস্থির করিম সাহেব। অফিস টাইম শেষ। হয়তোবা জ্যামে আটকে আছে কুরিয়ারের গাড়ি। অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। মাগরিবের আযান হয়। এবার করিম সাহেব বাসায় রওয়ানা হন। নির্ঘুম রাত কাটে। পরের দিন অফিসে গিয়েই সেই নম্বরে ফোন দেন। ফোন যাচ্ছে না। রিডায়াল করতে থাকেন। না, ফোন বন্ধ। সবগুলো নম্বরই বন্ধ।
করিম সাহেবের বুকটা কেঁপে ওঠে। পাগলের মত ফোন করতে থাকেন। কোন লাভ হয় না। বুকের ভিতর চিন চিনে ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। চোখ খোলেন তিনি। বুঝতে পারেন হাসপাতালের বেডে। এদিক ওদিক তাকান। খোদেজাকে দেখতে পান। তাঁর হুঁশ ফিরেছে দেখে শাড়ীর আঁচলে চোখ মোছে। ছেলেমেয়ে ও আছে। কি হয়েছিল তা মনে করার চেষ্টা করেন। বুঝতে পারেন অফিসেই বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। সহকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। “দ্রুত হাসপাতালে এসেছিলেন, এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন”- ডাক্তারের হাসিমুখ দেখলেন। “স্যার, আচ্ছালামু আলাইকুম। আমি গ্রামীণ ফোন থেকে বলছি। যারা দীর্ঘদিন গ্রামীণ ফোন ব্যবহার করছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে কখনো কোন অভিযোগ হয়নি, এমন দুই লাখ সেরা গ্রাহকের মধ্যে লটারী করা হয়েছে। সেরা দুই লাখ গ্রাহকের মধ্যে দ্বিতীয় ভাগ্যবান আপনি। আপনি পুরস্কার হিসাবে পাবেন একটি বারো সিটের নতুন মাইক্রোবাস কিংবা ২২ লাখ নগদ টাকা। পুরস্কারের চিঠি হাতে পাওয়ার আগে কাউকে একথা বলা যাবে না। আপনি দয়া করে এখনই ০১৭১৪৩২৭………..নম্বরে ফোন করুন। ”
ফোন ব্যাক করতেই অফিসিয়াল ফর্মালিটিজগুলো খুব সুন্দর ভাবে বোঝানো হয় করিম সাহেবকে। গাড়ীর কাগজপত্র রেডি এবং রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। ছেলেটা এতো ভদ্র ও বিনয়ী, কোন সন্দেহ হয়নি তাঁর। নানা কথা ভাবতে ভাবতে সময় কেটে যায়। তিনদিন পর আবার অফিস যেতে শুরু করেন করিম সাহেব। গ্রামীণ ফোন অফিসে যোগাযোগ করে জানা যায় এরকম কোন লটারী কিংবা পুরস্কার প্রদানের বিষয় পুরোপুরি ভিত্তিহীন। করিম সাহেব প্রতারিত হয়েছেন। তাঁর সারাজীবনের সঞ্চয় এভাবে প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিল!
কেন কারো সাথে শেয়ার করতে বারন করেছিল তা তিনি বুঝতে পারেন। নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছা করে তাঁর। পুরস্কার প্রাপ্তির খবর শেয়ার না করার কোন কারন ছিল না-এটি কেন তাঁর মাথায় আসেনি। গ্রাহক বাড়ানোর কৌশল হিসাবে ফোন কোম্পানী কোটি টাকার বিজ্ঞাপন প্রচার করে। কিন্তু এই ধরনের পুরস্কারের কথা জানালে তো গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার কথা। অথচ এই ব্যাপারে কোন বিজ্ঞাপন কিংবা বিজ্ঞপ্তিতো তাঁর চোখে পড়েনি। এসব চিন্তা কেন যে মনে আসে নি! এজীবনে আর কাউকে বিশ্বাস করবেন না। করিম সাহেব চরম ধাক্কা খেয়ে শিখলেন।
প্রতারনা ও প্রতারকের ইতিহাস অনেক পুরোনো। সময়ের সাথে সাথে শুধু ধরণ পাল্টায়। আমরা যদি একটু সতর্ক হই, চিন্তাভাবনায় যৌক্তিক হই, অন্তর থেকে লোভ পরিহার করি তা’হলে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যাবে।
হাসপাতাল ছেড়েছেন কয়েকদিন। করিম সাহেব কেমন যেন মনমরা। শরীরের ওপর দিয়ে একটা ধকল গেছে। খোদেজা বেগম ভাবে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সহকর্মীরা কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন। মলিন মুখে ভালো আছেন জবাব দেন। রাতে ঘুমাতে পারেন না। তিনি কি স্ত্রীকে সব খুলে বলবেন? জানাজানি হয়ে যাবে। মানুষ বোকা ভাববে। সবাই বিদ্রূপ করবে। স্বল্পভাষী খোদেজা তীর্যক মন্তব্য করবে। ছেলেমেয়ে মুখ টিপে হাসবে। তাদের বাবা কি বোকা।
করিম সাহেব সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। মাঝেমধ্যেই করিম সাহেব ঐসব নম্বরে সংযোগ পেতে চান। সব বারই ব্যর্থ, মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায় না। এভাবে আরো এক সপ্তাহ কেটে যায়। রাতে এপাশ-ওপাশ করেন। গভীর রাতে মশারী থেকে বেরিয়ে জানালায় দাঁড়ান। গভীর রাতে ট্রাক আর কাভার্ড ভ্যানের শব্দ। খোদেজা বেগম সবই টের পান। স্বামী রাতে ঘুমান না। জিজ্ঞাসা করে সদুত্তর পায় না। বেশী প্রশ্ন করতে সাহসেও কুলায় না।
এমনিতে করিম সাহেব গোবেচারা টাইপের মানুষ। তবে বড্ড অভিমানী। ভেতরে ভেতরে করিম সাহেব ক্লান্ত। খোদেজাকে সব খুলে বলবেন। পঁচিশ বছর বিয়ে হয়েছে। স্ত্রীকে কোন কিছু গোপন করেন নি। খোদেজাই তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। দু’তিন দিন সংকল্প করেও বলা হয়ে ওঠেনা। আজ যে করেই হোক বলবেন। কখন বলা যায়। শুক্রবার, অফিস নাই। সারাদিন বাসায় থাকবে। আজই সুযোগ। ছেলেমেয়ে দু’জনই আজ বাসায়। ছোট্ট বাসা। সুযোগ হয় না। গভীর রাত।
সব শুনে খোদেজা নির্বাক। বিশ্বাস হতে চায় না। বিয়ের পর স্বামীকে দেবতা মনে করে এসেছে। কখনো লোভী হতে দেখেনি। শেষের দিকে করিম সাহেবের কন্ঠ ভারী হয়। পরম মমতায় স্বামীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। দু’জনেই চুপ করে থাকে। অনেকক্ষন পর খোদেজাই প্রথম কথা বলে। তার দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাই পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানায় আছে। পরেরদিন বাসা খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। অনেকদিন যোগাযোগ নাই।
বশির দারোগা চুপচাপ শোনে। এতোটা বোকামী। বশিরের ভীষন রাগ হয়। তার ইচ্ছা হয় ভগ্নিপতির গালে ঠাস করে চড় মারে। খালাতো বোনের সাথে সম্পর্ক খুব শীতল। তাই খুব একটা কথা হয় না। শুষ্ক কন্ঠে বশির মিয়া বাঁকা কথা শোনায়। খোদেজা অপমান বোধ করে। লজ্জ্বায় মুখ তুলতে পারেন না। বশিরের কথা শুনে করিম সাহেবের মনে হয় তিনিই প্রতারিত নন। তিনি নিজেই প্রতারনা করেছেন, অপরাধী।
বশির মিয়ার কাছে এই গল্প পুরোনো। আগেও এরকম তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে। কোনটারই প্রতিকার দিতে পারে নাই। কি করবে তা বুঝে উঠতেই পারে নাই। মটর সাইকেল স্টার্ট দিয়ে বশির মিয়া থানায় যায়। মিনিট বিশেক পরে ফেরত আসে। আশার কথা শোনায়। ডিবি’র লোকেরা নাকি এরকম প্রতারক গ্যাঙ ধরতে পারে। বশির মিয়া টেলিফোনে তার ব্যাচমেটের সাথে কথা বলে। ব্যাচমেট সন্ধ্যার পর ডিবি অফিসে দেখা করতে বলে।
আবারো বিদ্রূপের মুখামুখি হতে হবে। করিম সাহেব মানসিক প্রস্তুতি নেন। বশির মিয়ার ব্যাচমেট করিম সাহেবকে নিয়ে তার বসের রুমে ঢুকে। এসি সাহেবের বয়স কম। করিম সাহেবকে বসতে ইঙ্গিত করেন। ইতস্ততঃ করে করিম সাহেব সামনের চেয়ারটাতে বসে পড়েন। বশির মিয়া আর তার ব্যাচমেট দাঁড়িয়ে থাকে। এসি সাহেব প্রশ্ন করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পুরো কাহিনী শোনেন। প্রতারকের নম্বর এবং বিকাশ নম্বরগুলো নোট করেন। তিনি দেখবেন বলে করিম সাহেবকে বিদায় দেন। বশির মিয়ার মটর সাইকেলে করিম সাহেব বাসায় ফেরেন। এসি সাহেব তাকে কোন আশ্বাস দেন নি। করিম সাহেব কিছুটা হতাশ।
এসি সাহেব তার এডিসিকে সঙ্গে নিয়ে ডিসির রুমে যান। ডিসি স্যার অভিজ্ঞ মানুষ। সব শুনে কিছু নির্দেশনা দেন। এই ধরনের অভিযোগ আরো কয়েকটা এসেছে। একটা কিছু করা দরকার। মানুষকে প্রতারিত করছে। অনেক মানুষের সঞ্চয় হাতিয়ে নিচ্ছে। এসি সাহেব মাঠে নামেন। এডিসির সরাসরি তত্ত্বাবধানে তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্লেষন করেন। বুঝতে পারেন প্রতারকচক্র অনেক বেশী ধূর্ত। মোবাইলগুলোর রেজিস্ট্রেশন সব ভূয়া। প্রতারকদের অবস্থান এলাকা চিহ্নিত করে ফেলেন। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যায় না এরা। স্থানীয় পুলিশের সহায়তা নিয়ে ধরে ফেলেন কয়েকজন প্রতারক।
এরা খুব একটা শিক্ষিত নয়। কথায় খুব স্মার্ট। জিজ্ঞাসাবাদে অজানা তথ্য বেরিয়ে আসে। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকার ফুটপাতে অনেক ধরনের ক্যানভাসার থাকতো। কেউ তাবিজ, কেউ হালুয়া কিংবা কেউ বই বিক্রি করতো। সম্ভাব্য ক্রেতা আকৃষ্ট করতে হতো। ক্যানভাসারের বাচনিক দক্ষতার উপর বেচাবিক্রি নির্ভর করতো। এটাই ছিল তাদের জীবিকা। আস্তে আস্তে টেপ রেকর্ডার এসে যায়। ক্যানভাসারের জায়গা দখল করে টেপরেকর্ডার। ক্যানভাসারদের ব্যবসা গুটিয়ে যায়।
ক্যানভাসারদের একটা বড় অংশ পেশা পরিবর্তন করে। ক্ষুদ্র একটা অংশ প্রতারনার পেশায় নেমে পড়ে। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে টেলিফোনে কণ্ঠের জাদুতে মানুষকে কনভিন্স করে। প্রতারনার ফাঁদে ফেলে মানুষকে। পুরস্কারের প্রলোভনে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। ডিজিট দেখে অপেক্ষাকৃত পুরোনো নম্বরের গ্রাহক বেছে নয়। তারপর স্মার্ট কন্ঠে কল দিয়ে পুরস্কার প্রাপ্তির খবর দেয়। অন্যের সাথে শেয়ার করলে শিকার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই চাতুর্যের সাথে কারো সাথে শেয়ার করতে নিষেধ করে।
প্রচারেই প্রসার-ফোন কোম্পানীগুলো এই নীতিতে বিশ্বাস করে। পুরস্কার চালু করলে তা রেডিও-টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করবে। নানারকম বিজ্ঞাপন বানাবে। বারবার প্রচার করে কান ঝালাপালা করে ফেলবে। পোষ্টার বিলবোর্ড বানাবে। পুরস্কারতো গোপনে দেওয়ার কথা নয়। ফোন কোম্পানীর হটলাইনগুলোতে ফোন করেও বিষয়টা যাচাই করা সম্ভব।
এই ধরনের ঘটনায় প্রতারককে খুঁজে বের করা খুব কঠিন কাজ। প্রতারক ধরা পড়লেও সাজা নিশ্চিত করা আরো কঠিন। টাকা ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রতারনা প্রাচীন পেশা। সতর্ক থাকুন। এধরনের অফার পেলে নিজে নিজে পর্যালাচনা করুন। অন্যদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার সচেতনতায় প্রতারক তার পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হবে।
No comments:
Post a Comment