সুপ্রিমকোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য
অপসারণের প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চের মশাল মিছিলে প্রধামন্ত্রীকে ’কটূক্তির’
প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ও সনাতন উল্লাসকে
শাহবাগ ও ঢাবিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
একইসাথে
হেফাজতে ইসলামের দাবি মেনে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদের
মিছিল থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র
ইমরান এইচ সরকারকে ‘কুত্তার মতো’ পেটানোর হুমকি দিয়েছেন ছাত্রলীগের বর্তমান
ও সাবেক একাধিক নেতা।
সোমবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভ
কর্মসূচি শেষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা’ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত,
রাষ্ট্রদ্রোহিতা, প্রধানমন্ত্রীর মানহানি, আদালত অবমাননা ও তথ্য-প্রযুক্তি
আইন অনুযায়ী সুস্পষ্ট অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে গণজাগরণ
মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায়
বিভিন্ন ধারায় একাধিক মামলা দায়েরের ঘোষণা দেন।
শাহবাগে
মিছিল শেষে সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক
গোলাম রাব্বানী বলেন, “এই ইমরান এইচ সরকারকে শাহবাগে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।
“ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যেখানে ইমরান এইচ সরকার ও সনাতনকে
(সংস্কৃতিকর্মী) যেখানেই দেখা হবে, সেখানে কুত্তার মতো পেটানো হবে।”
এর
আগে গত তিন বছর আগে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল
আলম বিএনপির ‘বড় নেতাদের নেড়ি কুত্তার মতো’ পেটানোর হুমকি দিয়ে ব্যপক
সমালোচনায় পড়েছিলেন । সাবেক এই ছাত্রনেতা আবারো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
ইমরান এইচ সরকারকে তার শ্বশুরালয়ে গিয়ে ‘কষে থাপ্পড়’ মারার ঘোষণা দিয়েছেন।
নিজের ফেসবুক আইডিতে দেয়া পোষ্টে নাজমুল লিখেন,
শেখ হাসিনার বরাদ্দকৃত মিন্টু রোডের বাসায় থাকছ ঘুমাছ মল-মূত্র ত্যাগ করছ কর আমরা তো দেখতেও যাইনা কিন্ত বেয়াদবী টা আর করিছ না । তুই চিন্তা করতে পারোছ তুই কি ? তুই কত কোটি মানুষের কলিজায় হাত দিছোস একবার ভাবছোস । কারোর কিছুই করা লাগবোনা যেদিন আসবো সরাসরি তোর শশুরের বাড়িতে গিয়েই তার সামনে তোকে দুইটা কইষা থাপ্পর মারবো । পারলে যেনো কিছু করে তোর শশুর ।সজীব ওয়াজেদ জয় ভাই বলার পরও যারা ওকে বয়কট করননি আর যাই হোক আপনারা আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারেন না
এর
আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের
জামাতা ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বাধীন ওই মিছিলে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে
দেয়া বিভিন্ন কটূক্তিমূলক স্লোগান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগ
নেতা-কর্মীদের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সেদিনের
ওই মিছিলে স্লোগান দেয়া গণজাগরণমঞ্চের কর্মী সনাতন উল্লাসকে ‘যেখানেই
পাওয়া যাবে, সেখানেই পেটানো হবে’- এমন ঘোষণাও আসে সংগঠনটির বর্তমান ও
সাবেক নেতাদের দেয়া ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে।
এ
বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পরিবারকে
নিয়ে যারাই কটূক্তি করবে তাদের কোনো ছাড় নয়। আমরা ইমরান এইচ সরকার ও সনাতন
উল্লাসকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছি। তাদেরকে
দেখা মাত্র প্রতিরোধ করা হবে।’
তিনি
আরও জানান, সেদিনের মিছিলে যে স্লোগান দেয়া হয়েছে, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ
জানাই। ইতিমধ্যে আমাদের নেতাকর্মীদের অনেকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন এবং
থানায় মামলা করতে গেছেন।
এদিকে,ছাত্রলীগ নেতাদের নানা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘কে কী বললো- তা নিয়ে বিচলতি নই’!
ইমরান
এদিকে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ ও প্রতিরোধের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ
মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘এটা এক ধরনের প্রকাশ্য হুমকি।
এর আগেও বিভিন্ন সময় সত্য বলায় আমাদের হুমকি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের
দায়িত্ব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা। যখন কোনো দলীয় ক্যাডাররা একজন
মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে এ ধরনের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে- তখন এ
রাষ্টের গণতন্ত্র ও স্বাধীন মত প্রকাশের অবস্থা কি- তা সহজেই বোঝা যায়।
সরকারের দায়িত্ব তার এ ক্যাডার বাহিনীকে সামাল দেয়া। কারণ এতে খুব স্পষ্ট
প্রতীয়মান হচ্ছে- সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারছে না। স্বাধীন
মত প্রকাশকে ভয় পাচ্ছে। সেকারণেই তার ক্যাডাররা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে কে কী বললো- তা নিয়ে বিচলতি নই।’
তিনি
আরো বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। দেশের বিভিন্ন সংকটে
গণজাগরণ মঞ্চ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে রাজপথে থেকেছে। এতে দল-মত
নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ অংশ নিয়েছে। ভাস্কর্য অপসারণ বিরোধী
আন্দোলনেও তাই হয়েছে। সেখানে সবাই, সবার মতো করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আমরা
সবসময় বিভিন্ন অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে
এসেছি। প্রতিবাদের এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’
প্রসঙ্গত,
গত বৃহস্পতিবার ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইমরান বলেছিলেন,
মৌলবাদীদের ‘তুষ্ট করতে নোংরা রাজনৈতিক খেলায়’ নেমেছে সরকার, ‘আখের গোছাতে
ব্যবহার করছে’ ধর্মকে।
ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে পরদিন শাহবাগে
গণজাগরণের মিছিলে ‘ছি ছি হাসিনা, লজ্জায় বাঁচি না’ স্লোগান ওঠে; ওই মিছিলে
ইমরান সরকার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ওই স্লোগানের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
No comments:
Post a Comment