সোমা
(ছদ্মনাম) নামের ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, সেদিন বান্ধবীদের নিয়ে
হাতিরঝিলে গিয়েছিলাম, হঠাৎ ব্যস্ত সড়কে একটা ছেলে নিজ থেকেই ধাক্কা খেয়ে
মোবাইল হাত থেকে ফেলে দেয়, এরপর থেকেই শুরু হয় তাদের উল্টা পাল্টা কথা
বার্তা, এক পর্যায়ে লোকজন জড়ো হয়ে যায়, কোনো কিছু বোঝার আগেই অদ্ভুত রকমের
সমস্যায় নিজের খেই হারিয়ে ফেলি, সঙ্গে বান্ধবীরা থাকায় কিছুটা তর্ক করতে
পেরেছিলাম, এক পর্যায়ে ছেলেটি দাবী করে তার ২৫ হাজার টাকা দামের মোবাইলটি
ঠিক করে দিতে হবে, না হলে বাসায় অভিভাবকদের জানাবে। প্রায় মিনিট দশেকের মতো
বাকবিতণ্ডার পর তারা জানায় আপু আমরা প্র্যংক ভিডিও করছিলাম, ওই যে দেখুন
ক্যামেরা।
ঝর্ণা (ছদ্মনাম): পরিবারের কয়েকজন মিলে আমরা বসুন্ধারা মলে শপিং করছিলাম, এক সময় আমি আর আমার ভাই চলন্ত সিঁড়ি (এস্কেলেটর) দিয়ে পাঁচ তলার দিকে যাচ্ছিলাম, পাশের চলন্ত সিঁড়ি (এস্কেলেটর) থেকে হঠাৎই একটা ছেলে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার হাত ছুঁয়ে দেয়, যা ছিল সত্যিই ভীতিকর ও অসম্মানজনক। পরে আমার ভাই নীচে নেমে তাদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা প্র্যাংকের কথা বলে।
তরুণ সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগ ও ভিডিও আদান প্রদানের অনলাইন মাধ্যমগুলোতে প্র্যাংক ভিডিও তৈরির নামে (হাস্যরসের মাধ্যমে) নারীদের হয়রানি করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে এরকম অসংখ্য প্র্যাংক ভিডিও দেখা গেছে যেখানে ‘কৌতুকের’ নামে নারীদের হয়রানি করা হয়েছে।
মনস্তত্ত্ববিদ, সমাজ বিজ্ঞানী ও অনলাইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিডিও তৈরির নামে এই ধরনের রুচিহীন ও অনৈতিক কার্যক্রম রোধে তরুণ সমাজকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পুলিশ বলছে, প্র্যাংকের নামে কাউকে হয়রানি করা হলে এই ধরনের কর্মকাণ্ড অবশ্যই অপরাধের মধ্যে পড়বে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেন এমনভাবে প্র্যাংকের ব্যবহার করা হচ্ছে এ সম্পর্কে ভ্লগার ও অনলাইন বিশেষজ্ঞ সোলায়মান সুখন বলেন, প্র্যাংকের ব্যবহার যেভাবে হচ্ছে তা সম্পূর্ণভাবে ভুল। টেকনোলজি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার ফলে আমাদের বেশকিছু তরুণেরা এমনটা করছে। বহিঃবিশ্বে প্র্যাংক সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে ব্যঙ্গ রসাত্মক কিছু করা হয়, কিন্তু আমাদের মতো নারী বা অন্য কাউকে হেয় প্রতিপন্ন বা হয়রানি করা হয় না।
ইউটিউবে গিয়ে দেখা যায় ফ্রেন্ডজ বুম (Friendz Boom), আয়নাঘর (Aynaghor), Adda Khana Productions, jony the naughty boy নামের চ্যানেল গুলোতে এই ধরনের অসংখ্য প্রাংক আপলোড করা হচ্ছে নিয়মিত। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্র্যাংকের নামে মানুষকে নাজেহাল করার সংস্কৃতি স্বাভাবিক কোন বিষয় কি না এমন প্রশ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীবের কাছে।
তিনি বলেন, সামাজিকভাবে দেখলে বলা যায়, এই ধরনের প্র্যাংক যারা করছেন, তারা সমাজের অসুস্থ মানুষ। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক। ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে তারা তাদের নোংরা মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ করছেন। এমনিতেই আমাদের সমাজে নারীরা নানা ধরনের সহিংসমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন। এর সঙ্গে যদি প্র্যাংকের নামে নতুন করে নির্যাতন বা উত্যক্ত করার বিষয়গুলো যোগ হয়, তাহলে এটি রীতিমতো ভয়ংকর আকার ধারণ করবে।
প্র্যাংকের মাধ্যমে ভয় পেয়ে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারেন বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার।
তিনি বলেন, না বলে হাস্যরস বা কৌতুকের মাধ্যমে ভিডিও করা নারীর জন্য অসম্মানজনক ও মর্যাদার প্রশ্ন। যারা মনের দিক দিয়ে শক্তিশালী না তারা কিন্তু এরকম অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারেন, এমনটি হ্যার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
প্র্যাংক ভিডিও তৈরির এমন নেতিবাচক পথ থেকে তরুণ সমাজকে বের করতে হলে করণীয় কি জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিয়েছেন।
ভ্লগার সোলায়মান সুখন বলেন, আমাদের আচার-আচরণে মননশীলতার পরিচয় দিতে হবে আমাদের সেলফ সেন্সর (আত্ম-সংযম) থাকতে হবে। ইউটিউবে ভাইরাল হওয়ার জন্য প্র্যাংকের আশ্রয় নেওয়ার দরকার নেই, প্র্যাংক করে কেউ গ্রেট হতে পারে না। আমাদের সমাজে যে আগ্রাসী আচরণগুলো রয়েছে সেখান থেকেই এই প্র্যাংকের আবির্ভাব। আমাদের আরো রুচিশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সর্বোপরি এইসব ক্যালচারের বিপক্ষে প্রবীণ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও যারা এসব অদ্ভুত প্র্যাংক করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
তরুণদের মূল্যবোধ ও মানসিকতার বিকাশ ঘটানোর কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীব। নারীর প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় মনে করে তিনি বলেন, আমাদের সমাজে নারীকে আনন্দ-উপভোগের বিষয় হিসেবে ব্যবহার কর হয়। এগুলো কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার বলেন: দেশের আইন-কানুন সম্পর্কেও তরুণদের জানাতে হবে। অন্যের জন্য ভালো কিছু করা শেখাতে হবে। স্কুলের সিলেবাসে এমন কিছু জিনিস যোগ করতে হবে যাতে কিশোররা হিংস্র না হয়ে অন্যের প্রতি নমনীয় ও সংবেদনশীল হতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইমের উপকমিশনার (ডিসি) আলিমুজ্জামান বলেন, সাধারণত কারও পূর্ব অনুমতি ছাড়া ভিডিও গ্রহণ বা প্রকাশ, অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। প্র্যাংকের মাধ্যমে কাউকে যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয় এবং ভুক্তভোগীরা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
ঝর্ণা (ছদ্মনাম): পরিবারের কয়েকজন মিলে আমরা বসুন্ধারা মলে শপিং করছিলাম, এক সময় আমি আর আমার ভাই চলন্ত সিঁড়ি (এস্কেলেটর) দিয়ে পাঁচ তলার দিকে যাচ্ছিলাম, পাশের চলন্ত সিঁড়ি (এস্কেলেটর) থেকে হঠাৎই একটা ছেলে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার হাত ছুঁয়ে দেয়, যা ছিল সত্যিই ভীতিকর ও অসম্মানজনক। পরে আমার ভাই নীচে নেমে তাদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা প্র্যাংকের কথা বলে।
তরুণ সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগ ও ভিডিও আদান প্রদানের অনলাইন মাধ্যমগুলোতে প্র্যাংক ভিডিও তৈরির নামে (হাস্যরসের মাধ্যমে) নারীদের হয়রানি করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে এরকম অসংখ্য প্র্যাংক ভিডিও দেখা গেছে যেখানে ‘কৌতুকের’ নামে নারীদের হয়রানি করা হয়েছে।
মনস্তত্ত্ববিদ, সমাজ বিজ্ঞানী ও অনলাইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিডিও তৈরির নামে এই ধরনের রুচিহীন ও অনৈতিক কার্যক্রম রোধে তরুণ সমাজকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পুলিশ বলছে, প্র্যাংকের নামে কাউকে হয়রানি করা হলে এই ধরনের কর্মকাণ্ড অবশ্যই অপরাধের মধ্যে পড়বে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেন এমনভাবে প্র্যাংকের ব্যবহার করা হচ্ছে এ সম্পর্কে ভ্লগার ও অনলাইন বিশেষজ্ঞ সোলায়মান সুখন বলেন, প্র্যাংকের ব্যবহার যেভাবে হচ্ছে তা সম্পূর্ণভাবে ভুল। টেকনোলজি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার ফলে আমাদের বেশকিছু তরুণেরা এমনটা করছে। বহিঃবিশ্বে প্র্যাংক সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে ব্যঙ্গ রসাত্মক কিছু করা হয়, কিন্তু আমাদের মতো নারী বা অন্য কাউকে হেয় প্রতিপন্ন বা হয়রানি করা হয় না।
ইউটিউবে গিয়ে দেখা যায় ফ্রেন্ডজ বুম (Friendz Boom), আয়নাঘর (Aynaghor), Adda Khana Productions, jony the naughty boy নামের চ্যানেল গুলোতে এই ধরনের অসংখ্য প্রাংক আপলোড করা হচ্ছে নিয়মিত। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্র্যাংকের নামে মানুষকে নাজেহাল করার সংস্কৃতি স্বাভাবিক কোন বিষয় কি না এমন প্রশ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীবের কাছে।
তিনি বলেন, সামাজিকভাবে দেখলে বলা যায়, এই ধরনের প্র্যাংক যারা করছেন, তারা সমাজের অসুস্থ মানুষ। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক। ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে তারা তাদের নোংরা মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ করছেন। এমনিতেই আমাদের সমাজে নারীরা নানা ধরনের সহিংসমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন। এর সঙ্গে যদি প্র্যাংকের নামে নতুন করে নির্যাতন বা উত্যক্ত করার বিষয়গুলো যোগ হয়, তাহলে এটি রীতিমতো ভয়ংকর আকার ধারণ করবে।
প্র্যাংকের মাধ্যমে ভয় পেয়ে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারেন বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার।
তিনি বলেন, না বলে হাস্যরস বা কৌতুকের মাধ্যমে ভিডিও করা নারীর জন্য অসম্মানজনক ও মর্যাদার প্রশ্ন। যারা মনের দিক দিয়ে শক্তিশালী না তারা কিন্তু এরকম অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারেন, এমনটি হ্যার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
প্র্যাংক ভিডিও তৈরির এমন নেতিবাচক পথ থেকে তরুণ সমাজকে বের করতে হলে করণীয় কি জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিয়েছেন।
ভ্লগার সোলায়মান সুখন বলেন, আমাদের আচার-আচরণে মননশীলতার পরিচয় দিতে হবে আমাদের সেলফ সেন্সর (আত্ম-সংযম) থাকতে হবে। ইউটিউবে ভাইরাল হওয়ার জন্য প্র্যাংকের আশ্রয় নেওয়ার দরকার নেই, প্র্যাংক করে কেউ গ্রেট হতে পারে না। আমাদের সমাজে যে আগ্রাসী আচরণগুলো রয়েছে সেখান থেকেই এই প্র্যাংকের আবির্ভাব। আমাদের আরো রুচিশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সর্বোপরি এইসব ক্যালচারের বিপক্ষে প্রবীণ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও যারা এসব অদ্ভুত প্র্যাংক করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
তরুণদের মূল্যবোধ ও মানসিকতার বিকাশ ঘটানোর কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীব। নারীর প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় মনে করে তিনি বলেন, আমাদের সমাজে নারীকে আনন্দ-উপভোগের বিষয় হিসেবে ব্যবহার কর হয়। এগুলো কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার বলেন: দেশের আইন-কানুন সম্পর্কেও তরুণদের জানাতে হবে। অন্যের জন্য ভালো কিছু করা শেখাতে হবে। স্কুলের সিলেবাসে এমন কিছু জিনিস যোগ করতে হবে যাতে কিশোররা হিংস্র না হয়ে অন্যের প্রতি নমনীয় ও সংবেদনশীল হতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইমের উপকমিশনার (ডিসি) আলিমুজ্জামান বলেন, সাধারণত কারও পূর্ব অনুমতি ছাড়া ভিডিও গ্রহণ বা প্রকাশ, অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। প্র্যাংকের মাধ্যমে কাউকে যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয় এবং ভুক্তভোগীরা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
No comments:
Post a Comment