Thursday, May 25, 2017

‘হেফাজতকে দেয়া কথা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী’; গভীররাতে বিক্ষোভের মুখেই অপসারিত হলো ভাস্কর্য (ভিডিও)

‘হেফাজতকে দেয়া কথা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী’; যেভাবে গভীররাতে বিক্ষোভের মুখেও অপসারিত হলো গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য

হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবীর মুখে অবশেষে গভীররাতে  সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরানো হলো ‘গ্রিক দেবী’র ভাস্কর্য।  বৃহস্পতিবার রাত  ১১টার দিকে ভাস্কর্যটি সরানোর কাজ শুরু হয়ে ভোররাত পর্যন্ত এই ভাস্কর্য অপসারনের কাজ চলে ।
এর আগে আসন্ন পবিত্র রমজানের আগেই ভাস্কর্যটি সরানোর দাবিতে গত ১৮ মে বিবৃতি দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। গত বছর ডিসেম্বরে সুপ্রিমকোর্টের সামনে এই ভাস্কর্যটি স্থাপিত হয়। এই স্থাপনের প্রতিবাদে বেশ কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে হেফাজতে ইসলামসহ দেশের কয়েকটি ইসলামি দল।
ভাস্কর্যটি অপসারণের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মত দিয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই এটি অপসারণ হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। একদিন আগে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত আসে অপসারণের।
এদিকে ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে  রাতে সুপ্রিম কোর্টের বাইরের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে গণজাগরণ মঞ্চ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনতা।
ভাস্কর্য অপসারনের খবর পেয়ে প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় ‘শাহবাগের আন্দোলনকারীদের’। তাদের দাবি, হেফাজতের কথায় ওই ভাস্কর্য অপসারণ করা যাবে না। রাত দেড়টার পর থেকে তারা এখানে জমায়েত হন।
বিক্ষোভকারীদের  দাবী , ‘আমরা রক্ত দিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আজকের এ ঘটনা স্বাধীনতার সঙ্গে প্রতারণা। হেফাজতের কথা শুনে তারা এ প্রতারণার কাজ করছে।’ যতক্ষণ পর্যন্ত এ ভাস্কর্য সরানোর অবস্থান থেকে সরকার সরে না আসবে, ততক্ষণ তারা সেখানে অবস্থান করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও, হেফাজতের আস্তানা’, ‘আপোস না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’।
ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচীসহ কয়েকটি ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা এ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। এর বাইরে কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবেও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।



সুপ্রিমকোর্টের প্রধান ফটকের সামনে ‘ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও, হেফাজতের আস্তানা’, ‘আপোস না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ বিক্ষোভকারীদের শ্লোগান
তারা হাইকোর্টের সামনের রাস্তাটির একপাশের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এর আগেও ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়া হবে নাকি, সুপ্রিম কোর্টের অন্য কোনো স্থানে স্থাপন করা হবে—তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়। তাঁরা কখনোই এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক কয়েক দিন আগে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ভাস্কর্য অপসারণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতির ইচ্ছায় এই ভাস্কর্যটি গত ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বসানো হয়। এটিকে জাস্টিশিয়া নামে অবহিত করা হয়। এটি রোমান শব্দ। এর অর্থ বিচারক। পৃথিবীর অনেক দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জাস্টিশিয়ার ভাস্কর্য রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে এই জাস্টিশিয়া তৈরি করে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, যেখানে উপস্থিত হলে এ স্থানের পবিত্রতা জনমনকে প্রভাবিত করবে। এরই অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে স্থাপন করা হয় একটি ভাস্কর্য।
ভাস্কর্যটি স্থাপন করার পরই কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এই ভাস্কর্যকে গ্রিক দেবীর সঙ্গে তুলনা করে তা অসারণের দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশে খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনসহ ধর্মীয় কয়েকটি সংগঠন ভাস্কর্য অপসারণের দাবি করে। তারা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভেরও চেষ্টা করে। সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেয়।
আগামী ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিলো । গত এপিলে হেফাজত নেতা আমির শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন। এ সময় তাঁরা ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর্য সরানো হবে বলে তাঁদের কথা দেন। এরপর থেকে ধর্মীয় সংগঠনগুলো আবারও আন্দোলনের হুমকি দেয়। হেফাজতে ইসলাম ৫ জানুয়ারির মতো কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাতে গণমাধ্যমকে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবীসহ অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডাকেন। সেখানে তিনি ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে সবার মতামত জানতে চান। সবাই মত দেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এটা সরানো প্রয়োজন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবনের পাশে এটি নতুন করে বসানোর জন্য প্রস্তুতি চলছিল।
সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে  ১২টার দিকে। গনমাধ্যম কর্মীদের সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে সেভাবে ঢুকতে না দিলেও গ্রিক দেবীর ভাস্কর্যটি অপসারনের সময়কালীন একটি ভিডিও এসে পৌছেছে আমাদের কাছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে,বেশশ্রমিক হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যের পাদদেশ ভাঙার চেষ্টা করছেন।   ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হকের মনোনীত  একদল  শ্রমিক ভাস্কর্যটির ভিত ভাঙার কাজ শুরু করেন।
এসময় সাংবাদিকদের সামনে ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃনাল হক জানান, ‘সুপ্রিমকোর্টের আদেশক্রমে এটি আমি বানিয়েছিলাম । এখন সরানোর সময় আমি বিষয়টি তদারকি করছি যেন এটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন,  স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছে হার মানতে হচ্ছে। আমরা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছি না। তবে কার নির্দেশে ভাস্কর্য সরানো হচ্ছে, তা তিনি বলতে রাজি হননি। মৃণাল হককে এ সময় অশ্রুসিক্ত দেখা যায়।
তিনি আরও  বলেন, এটি তিনি বিভিন্ন চাপে বাধ্য হয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন। বিভিন্নভাবে বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর ওপর ভাস্কর্য সরিয়ে নিতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এটি আপাতত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবনের পাশে এটি বসানো হতে পারে।
এক্সক্লুসিভ ভিডিওটি দেখুন এখানে



এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনার সন্তান হারিয়ে গেলে প্রতিক্রিয়া কী হবে ভেবে নেন।’

No comments:

Post a Comment