Saturday, May 27, 2017

জেলখানার ভিতরেও থেমে নেই সাফাতদের অপকর্ম!

 রাজধানী বনানীর আলোচিত রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলার প্রধান দুই আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ কারাগারে মারামারি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর তাদের মধ্যে মিলমিশ হয়েও গেছে। শুক্রবার বিকাল থেকেই তারা আবার আগের মতো জেলখানাতে মজা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি জেলখানার ভিতরেও তারা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করছে বলে জানা গেছে।
কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বরত একজন কারারক্ষী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাঈম আশরাফকে কারাগারে নিয়ে আসা হয়। শুক্রবার সকালে ঘটনার পর তাদের মধ্যে মিলমিশ হয়ে গেছে। এখন তারা (সাফাত-সাদমান-নাঈম আশরাফ) নেশা করেই সময় পার করছেন। ব্ল্যাক ব্রান্ডের সিগারেট ও ইয়াবাও নাকি তারা খাচ্ছেন। যদিও কারা কর্তৃপক্ষ বলছে শুধু সিগারেটের কথা।
এরআগে নাঈম আশরাফকে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে শাপলা ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তাকে দেখেই ক্ষেপে যান সাফাত আহমেদ। নাঈম আশরাফের গলা চেপে ধরে ইংরেজি গালি দিয়ে (প্রকাশ অযোগ্য) চড় থাপ্পড় মারতে শুরু করে। এসময় কারারক্ষীরা এবং সাদমান দুজনকে আলাদা করে ফেলেন। এরপরও নাঈম সেখানেই থাকবে বলে কারা কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু দুজনকেই সাবধান করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, রাজধানীর বনানীতে দ্য রেইনট্রি হোটেলে আটকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর প্রভাব বিস্তার করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ। এখনো সে চেষ্টাই চলছে বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার আদালতে দেওয়া দুই ছাত্রীর জবানবন্দিতে এ ধরনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তারা জানিয়েছেন, ঘটনার শুরু থেকেই তারা বনানী থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। দুই শিক্ষার্থী যখন মামলা করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয় তখন সাফাত ও নাঈম ধর্ষণের ভিডিও ছেড়ে দিয়ে তাদের সামাজিকভাবে চাপে রাখার শেষ হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব বাধা উপেক্ষা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন দুই শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ২২ ধারার বিধানমতে ঢাকা মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন তার খাসকামরায় ওই দুই ছাত্রীর সেই জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এর আগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান জবানবন্দি রেকর্ড করার অনুমতি দেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ২৮ মার্চ দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনাটি মামলা হওয়ার কয়েকদিন আগেই ধর্ষকদের মাধ্যমে জানতে পারে পুলিশ। বিশেষ করে সাফাত ও নাঈম ধর্ষণের ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কয়েক দফা সমঝোতার চেষ্টা চালায়। কিন্তু দুই শিক্ষার্থী তাদের কথা শুনছিলেন না।
এক পর্যায়ে সাফাত ও নাঈম একজন সংসদ সদস্যের ছেলেকে দিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করে। সংসদ সদস্যের ছেলের মাধ্যমে দুই শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের কেউ যেন বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের মামলা, উচ্চবাচ্য না করে- সে বিষয়ে হুমকি দিয়েছিল। এতেও দুই শিক্ষার্থী তাদের অবস্থান থেকে না সরতে চাইলে সাফাত ও নাঈম আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। উপায়ন্তর না পেয়ে বনানী থানা পুলিশ কর্মকর্তাদের মামলা না নিতে সব ধরনের চেষ্টা চালায় সাফাত ও নাঈম। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই শিক্ষার্থী যখন বনানী থানায় মামলা করতে যায় তখন তাদের নানাভাবে নাজেহাল করা হয় খোদ থানার ভেতরেই। দুই শিক্ষার্থীকে থানার ভেতরে গালিগালাজ করেন বনানী থানার ওসি। মামলা না নিয়ে উল্টো দুই শিক্ষার্থীর চরিত্র নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলেন। ডিএমপির তদন্ত কমিটির কাছে এ ধরনের তথ্য দিয়েছেন দুই শিক্ষার্থী।

No comments:

Post a Comment