দামি ব্র্যান্ডের প্রাইভেটকারে কখনো তারা
‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়’ কখনো বা র্যাব-পুলিশের স্টিকার সাঁটিয়ে বনে যান
দপ্তরের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ‘নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেট’। সুযোগ বুঝে দিনে-দুপুরেই বহর নিয়ে ঢুকে পড়েন কোনো
প্রতিষ্ঠানে। এরপর নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজনের কাছ থেকে
হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা।
পোশাক-আশাকে
নিরেট ভদ্রলোক, বাচনভঙ্গিও চমৎকার। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে
এভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল একটি চক্র।
গত
বৃহস্পতিবার দুপুরেও গাড়িতে ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়’ স্টিকার লাগিয়ে
রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনার সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি
প্রতিষ্ঠানে অভিযানের নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে চক্রটি। পরে সেখান
থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ভদ্রবেশী দুই প্রতারক মো. কামরুল ইসলাম (২৮) ও মো.
আলীমউজ্জামানকে। তাদের ব্যবহৃত একটি সিলভার রঙের টয়োটা প্রাইভেটকারও
(ঢাকা৬২০/ম, গ্যারেজ নম্বর) জব্দ করে পুলিশ। তবে টের পেয়ে আগেই পালিয়ে যায়
তাদেরই সহযোগী জুয়েল (৩২)।
জানা গেছে,
গ্রেপ্তার কামরুলের বাবার নাম মৃত রমজান আলী। গ্রামের বাড়ি পাবনার
কালাচাঁদপুর। বর্তমানে থাকেন রাজধানীর বাড্ডার লিংক রোডের ৬ নম্বর সড়কের ১২
নম্বর বাড়িতে। আলীমউজ্জামানের বাবা মৃত দেওয়ান আ. রহিম, গ্রামের বাড়ি
রাজশাহীর বাঘমারা জুগিপাড়ায়। সপরিবারে তিনি রমনা থানার সিদ্ধেশ্বরী খন্দকার
গলির প্যাসিফিক হার্টে থাকেন।
গত
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডযুক্ত একটি টয়োটা
প্রাইভেটকারের সামনের গ্লাসে ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়’ লেখা স্টিকার লাগিয়ে
তাদের ট্রেনিং সেন্টারে ঢুকে পড়েন কামরুল ইসলাম ও আলীমউজ্জামান। তারা
নিজেদের পিএম কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। একপর্যায়ে কামরুল ইসলাম
নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সচিবের ভাতিজা পরিচয় দিয়ে বলেন
তোমরা সরকারি নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বিদেশে লোক পাঠাচ্ছ। তাই এখন
থেকে বিদেশে লোক পাঠাতে হলে আমাদের ১০ লাখ টাকা দিতে হবে, না হয় তোমাদের
লাইসেন্স বাতিল করে দেব।
তারা নানা
ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দেখতে থাকেন। এ সময় তাদের আচরণ সন্দেহজনক
মনে হওয়ায় বিষয়টি পুলিশকে জানান প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে
পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জেরার একপর্যায়ে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেন
কামরুল ও আলীমউজ্জামান। এ ঘটনায় গতকাল দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করেছেন
বলেও জানান রফিকুল ইসলাম।
মামলার তদন্ত
কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিউল আলম-২ জানান,
গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহার করে
প্রতারণা করে আসছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। গতকাল তাদের রিমান্ড
চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেননি। চক্রের অন্য
সদস্য জুয়েলকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
No comments:
Post a Comment